চলমান জেন-জি বিক্ষোভ ও ক্রমবর্ধমান জনরোষের মুখে দেশ থেকে পালালেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি নিরিনা রাজোয়েলিনা। রোববার (১২ অক্টোবর) তিনি দেশ ছাড়েন ও সোমবার তার এই প্রস্থানের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুবসমাজের নেতৃত্বে রাজোয়েলিনার পদত্যাগের দাবিতে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। এ পরিস্থিতির মধ্যেই তার দেশত্যাগের খবর এসেছে।

জেন-জি বিক্ষোভের মুখে এবার দেশ ছেড়ে পালালেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট

একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। বিশেষ করে ফরাসি রাষ্ট্রীয় রেডিও আরএফআই রিপোর্টে বলা হয়, আন্তানানারিভোর ফরাসি নাগরিকত্ব থাকায় তাকে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে এক চুক্তির অংশ হিসেবে সরিয়ে নেওয়া হয়। তিনি সম্ভবত দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। আজ সোমবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার ফেসবুক পেজে সন্ধ্যা ৭টায় (১৬০০ জিএমটি) জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই রাজধানীতে বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে। সিটি হলের সামনে হাজারো মানুষ পতাকা উড়িয়ে ও স্লোগান দিয়ে জড়ো হয়, কিছু স্থানে সামরিক যানবাহন দেখা যায় বলে এএফপি প্রতিবেদকরা জানান।

এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘জেনারেশন জেড মাদাগাস্কার’ নামে পরিচিত তরুণ আন্দোলন, যারা দুর্নীতি, দারিদ্র্য এবং বিদ্যুৎ-জল সংকটের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন। আন্দোলনে অংশ নিয়েছে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, বিশেষ করে ক্যাপস্যাট ইউনিট, যারা ২০০৯ সালে রাজোয়েলিনার প্রথম ক্ষমতায় ওঠার সময় মূল ভূমিকা পালন করেছিল।

রাজোয়েলিনা ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত প্রথমবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০২৩ সালে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসেন। তবে সম্প্রতি সামরিক বাহিনীর সমর্থন হারানো এবং তরুণ প্রজন্মের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মুখে তিনি ক্রমেই রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিনই বিদ্যুৎ ও জল বিভ্রাট, দুর্নীতি এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্রথম দফায় সংঘর্ষে অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। তবে রাজোয়েলিনা এই সংখ্যাকে অস্বীকার করে দাবি করেন, নিহত ১২ জনই ‘লুটেরা ও ধ্বংসকারীর দলভুক্ত’ ছিলেন।

সামরিক বাহিনীর একাংশও সরকারের আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে কিছু সেনা সদস্য তাদের সহকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান যে তারা যেন বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি না চালায় এবং উর্ধ্বতনদের অন্যায় নির্দেশ উপেক্ষা করে। রাজধানীতে পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্টের পালিয়ে যাওয়া দেশটিকে গভীর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ক্ষমতার শূন্যতার দিকে ঠেলে দেবে।